বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ৪০টি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি খাল ও রাস্তা দখল করে ঘের ব্যবসা করছেন স্থানীয় ও বহিরাগত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। খালে বাঁধ দিয়ে তারা ছেড়েছেন মাছ। রাস্তাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ঘেরের ভেরি হিসেবে। আবার যে যার সুবিধা মত রাস্তা কেটে তৈরি করেছেন পানি নিস্কাশনের পথ।

উপজেলার জিউধরা, বহরবুনিয়া ও তেলিগাতী ইউনিয়নে প্রভাবশালীদের এমন দখলদারিত্বের কারণে খালগুলোতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় চলছেনা দ্রুতযান। মাঠে ফলছেনা একাধিক ধান ফসল। জমির মালিক ও কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন ঘের ব্যবসায়ীদের কাছে।

জানা গেছে, বহরবুনিয়া ইউনিয়নে ৩০ থেকে ৩৫টি সরকারি খাল রয়েছে। যার সবগুলোই প্রায় একযুগ ধরে বেদখল হয়ে আছে। প্রতিটি খালে কমপক্ষে ৮-১০টি স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ীরা এসব খাল দখল করে তাদের ঘেরের সাথে মিলিয়ে মাছ চাষ করছেন। এ এলাকায় লবণ পানির মাছ চাষে সাফল্য পাওয়ায় বহিরাগত অনেক ব্যক্তিও নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে এখানে ঘের ব্যবসা করছেন। ফলে জমির মালিকরা ইচ্ছা করলেই একাধিক ধান ফসল ফলাতে পারছেন না। ঘের ব্যবসায়ীদের কারনে অনেক জমি অনাবাদি রাখতে হয়। আবার অনেকে ইচ্ছে করলেও লবণ সহিষ্ণু (হিরা-২ জাতের) উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান চাষ করতে পারছেন না।

একই অবস্থা জিউধরা ইউনিয়নেও। এ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০টি খাল দখল করে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন ঘের ব্যবসায়ীরা। খালগুলো সরকারি হওয়া সত্ত্বেও এর নিয়ন্ত্রণ জবরদখলকারিদের হাতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় ও বহিরাগত অনেক নেতা এখানে দাপটের সাথে ঘের ব্যবসা করছেন। জমির মালিকানা না থাকলেও তারা নানা কৌশলে শতশত একর জমির ঘেরের মালিক। কোনও কোনও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও অবৈধ এসব ঘের ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

বহরবুনিয়া ইউনিয়নে জবরদখলকারি ঘের ব্যবসায়ীরা ঘেরের ভেরি হিসেবে ব্যবহার করে অনেক কাঁচা রাস্তা ধ্বংস করে দিয়েছেন। জিউধরা ইউনিয়নে ইটসোলিং ও ঢালাই রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ঘেরের কারনে। দাপুটে এসব ঘের মালিকরা রাস্তা কেটে পাইপ ও কাঠের বক্স বসিয়ে ঘেরে পানি ওঠানামা করাচ্ছেন। বহরবুনিয়া ইউনিয়নে এক ইঞ্চি পিচ ঢালাই রাস্তা নেই। নেই একটি পরিপূর্ণ পাকা রাস্তাও। বর্ষা মৌসুমে এ ইউনিয়নে নৌকা ছাড়া যাতায়তের কোন পথ থাকেনা। উপজেলা পরিষদের আইন-শৃংখলা বিষয়ক সভায় বেদখল হওয়া এসব খাল ও ঘেরের ভেরি হিসেবে ব্যবহৃত রাস্তাগুলো রক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদশা বলেন, জিউধরা ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০টি খাল স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ীরা বাধ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন।

বহরবুনিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. রিপন তালুকদার বলেন, এ ইউনিয়নে ৩০-৩৫টি খাল রয়েছে। যার সবগুলোই ঘের ব্যবসায়ীরা অসংখ্য বাধ দিয়ে তাদের সুবিধামত ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেসরকারিভাবে বন্ধ করে দেওয়া খালগুলোর তথ্য সংগ্রহ চলছে। শীঘ্রই এগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ঘেরের ভেরি হিসেবে যাতে আর কোন রাস্তা ব্যবহৃত না হয় সে জন্যও পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হবে।

 

কলমকথা/বি সুলতানা